নেত্রকোণা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের পটভূমি ও ইতিহাস
"কারিগরি শিক্ষায় প্রশিক্ষণ নিলে,
দেশ-বিদেশে কর্ম মিলে”
বাংলাদেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যার হার অনেক বেশী। সেই জনসংখ্যার সিংহভাগ সাধারণ গতানুগতিক শিক্ষায় শিক্ষিত । দেশে চাকরির তুলনায় সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত বেকারে সংখ্যা আশংকাজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে । দেশ আজ বেকার সমস্যার ভারে ভারাক্রান্ত। পাশাপাশি দেশে কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিতের হার ৫ থেকে ৬ শতাংশ । অথচ উন্নত বিশ্বে মধ্যম স্তরের কারিগরি শিক্ষায় শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর হার ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। একটি দেশ তখনই উন্নয়ন ঘটাতে পারে, যখন দেশের জনগোষ্ঠীর সিংহভাগ কারিগরি / বৃত্তিমূলক শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। আর এ লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাংলাদেশ সরকার কারিগরি শিক্ষা তথা বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বিদ্যমান ৬৪টি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অনুরূপ প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন । সরকার হৃদয়ঙ্গম করতে পেরেছেন যে, 'ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই । কারিগরি শিক্ষার ইতিবৃত্ত : দেশের বিভিন্ন কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে সংগঠিত, উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ১৯৬০ সালে কারিগরি শিক্ষা অধিদপ্তর স্থাপিত হয়। এর মধ্যে টেক্সটাইল টেকনোলজি, লেদার টেকনোলজি, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও দেশের বিভিন্ন স্থানে অদক্ষ জন সম্পদকে কারিগরি জ্ঞানে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করার নিমিত্তে সময়োপযোগী ট্রেড ভিত্তিক বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ দানের লক্ষ্যে সরকারি ৫১টি ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ভিটিআই) স্থাপিত হয় । সরকার কারিগরি শিক্ষাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে বেকারমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে দক্ষ মানব সম্পদ তৈরির নিমিত্তে ১৯৯৫ সালে ২ (দুই) বৎসর মেয়াদী এস.এস.সি (ভোকেশনাল) কোর্স নবম ও দশম শ্রেণী প্রবর্তন করেন। এরই ধারাবাহিকতায় বিদ্যমান ৫১টি ভিটিআইসমূহের সাথে আরো ১৩টি ভিটিআই স্থাপন করে ৬৪-তে উন্নীত হয় । ১৯৯৭ সালে ২(দুই) বৎসর মেয়াদী এস.এস.সি (ভোকেশনাল) কোর্সের ন্যায় কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে এইচ,এস,সি (ভোকেশনাল) কোর্স একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণী চালু হয় । ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউটগুলো কালের পরিক্রমায় ২০০৩ সালের ডিসেম্বর মাসে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে "সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ” এ নামকরণ করা হয় । টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজগুলো বর্তমানে দেশে নিবেদিতপ্রাণে কারিগরি শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন সাধন করে চলছে স্বমহিমায় ।
“ভাটির জনপদ নেত্রকোণা,
সর্বগুণে নেই তার তুলনা ।”
নেত্রকোণা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের অবস্থান :
নেত্রকোণা জেলার সদরে সরকারি কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো নেত্রকোণা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ । প্রতিষ্ঠানটি নেত্রকোণা জেলা সদরের সাতপাই এলাকায় ৩.৩১(তিন দশমিক তিন এক) একর জমির উপর বড় রাস্তার পাশে মনোমুগ্ধকর পরিবেশে অবস্থিত । এর পাশে রয়েছে নেত্রকোণা সরকারি পিটিআই, নেত্রকোণা সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস ও জেলা শিক্ষা অফিস (মাধ্যমিক) । এর অনতিদূরে রয়েছে লেবেল ক্রসিং বৃহৎ বাজার ও নেত্রকোণা রেল স্টেশন, যা বড় স্টেশন নামে পরিচিত। অবস্থানগত দিক থেকে প্রতিষ্ঠানটি নেত্রকোণার শিক্ষা কলোনীতে রয়েছে ।
প্রতিষ্ঠা ও কার্যক্রম:
১৯৭০ সালে সরকারি কারিগরি/ বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে নেত্রকোণা ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ডিটিআই) প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে নেত্রকোণা ভোকেশনাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (ভিটিআই) এর একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৩ সাল থেকে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি নেত্রকোণা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজ নামে পরিচিত। এটি প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক পর্যায়ে স্বল্পকালীন ৩মাস / ৬মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কোর্স চলে। পরবর্তীতে ১(এক) বৎসর মেয়াদে জাতীয় দক্ষতা মান-৩ এবং ২(দুই) বৎসর মেয়াদে জাতীয় দক্ষতা মান ২ চালু হয়। বর্ণিত কোর্সগুলোতে কোন সাধারণ শিক্ষা বিষয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না। অষ্টম শ্রেণী উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের জাতীয় দক্ষতা মান-৩ ও জাতীয় দক্ষতা মান-২ এ ভর্তি করা হতো। ফলে ভিটিআই থেকে উত্তীর্ণ জাতীয় দক্ষতা মান-৩ ও জাতীয় দক্ষতা মান-২ এর শিক্ষার্থীরা কারিগরি বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলেও সাধারণ শিক্ষা বিষয়ে পিছিয়ে ছিল বিধায় কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় তারা অবমূল্যায়িত হতো।
আর এ বিষয়টি নজরে এনে সরকার ১৯৯৫ সালে কারিগরি শিক্ষার পাশাপাশি সাধারণ শিক্ষার সমন্বয়ে এস. এস. সি (ভোকেশনাল) কোর্স নেত্রকোণা ডিটিআই-এ দুটি ট্রেডে (টেকনিক্যাল বিষয়) ১. ইলেকট্রিক্যাল ও 2. ফার্মমেশিনারি চালু হয়। ভিটিআই এর নিয়ন্ত্রণকারী কর্মকর্তার পদবী ছিল "সুপারিনটেনডেন্ট" । পরবর্তীতে টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের (এইচ, এসসি সমপর্যায়) প্যাটার্ণ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান প্রধানের পদবী “অধ্যক্ষ” করা হয় । সেই সাথে ভিটিআইসমূহের আমূল পরিবর্তন করে বিদ্যমান ২ (দুই) টি ট্রেডের সঙ্গে আরও ২ (দুই) টি ট্রেড সংযুক্ত করে মোট ৪ (চার) টি ট্রেড ১. জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস, ২. ফার্মমেশিনারি, ৩. ড্রেস মেকিং এবং ৪. ওয়েল্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন চালু করা হয়। দেশে ১৯৯৭ সাল থেকে এইচ.এস.সি (ভোকেশনাল) কোর্স চালু হলেও শিক্ষক স্বল্পতা ও অবকাঠামোগত কারণে নেত্রকোণা ভিটিআই-এ ২০০০ সাল থেকে এইচ.এস.সি(ভোকেশনাল) কোর্সে একাদশ শ্রেণীতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। যথা নিয়মে ২০০২ সাল হতে এইচ.এস.সি(ভোকেশনাল) দ্বাদশ শ্রেণী সমাপনী পরীক্ষা চালু আছে।
২০০৫ সালের জানুয়ারি মাস হতে এস.এস.সি (ভোকেশনাল) কোর্সের ৪ (চার) টি ট্রেড এর ডবল শিফট অর্থাৎ দ্বিতীয় শিফট চালু রয়েছে।
১. জেনারেল ইলেকট্রিক্যাল ওয়ার্কস
২. ফার্মমেশিনারি
৩. ড্রেস মেকিং ( বর্তমান নাম অ্যাপোরেল ম্যানুফেকচারিং এন্ড বেসিকস )
৪. ওয়েন্ডিং এন্ড ফেব্রিকেশন
বর্তমানে, এই প্রতিষ্ঠানটি ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে ১২শ শ্রেণির শিক্ষা প্রোগ্রাম প্রদান করে। এছাড়া, এটি Accelerating and Strengthening Skills for Economic Transformation (ASSET) এবং SEIP (Skills for Employment Investment Program) প্রকল্পের অধীনে ৪ মাস মেয়াদী প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালু রয়েছে। এই প্রোগ্রামের লক্ষ্য ছাত্রদের চাকরির সুযোগের জন্য প্রায়োগিক দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রদান করা।
নেত্রকোনা সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল ও কলেজের কোন কন্টেন্ট, ছবি, ভিডিও এমনকি কোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস কর্তৃপক্ষেরে অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
যদি কেহ বে-আইনিভাবে/ ইচ্ছাকৃতভাবে কোন কন্টেন্ট, ছবি, ভিডিও এমনকি কোন প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস এর বিকৃতি ঘটায়
তাহলে সরকারের অনলাইন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়ী থাকিবেন। -- অধ্যক্ষ, টিএসসি, নেত্রকোনা।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস